Screenshots
About মাযহাব ও তাকলীদ
মানুষের অনেক বিষয় আছে সহজাত, স্বভাবজাত। স্বভাবজাতভাবেই মানুষ তা বুঝতে পারে, অনুধাবন করতে পারে। তা বোঝানোর জন্য কুরআন হাদীস কিংবা অন্য কোনো দলিল-প্রমাণের প্রয়োজন পড়ে না। যেমন ক্ষুধায় আহার করা, পিপাসায় পান করা, অসুস্থতায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। ক্ষুধা লাগলে আহার করতে হয় কেন? পিপাসায় পান করতে হয় কেন? অসুখে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয় কেন? এসব বোঝানোর জন্য ভিন্ন দলিল-প্রমাণের প্রয়োজন পড়ে না। এগুলো মানুষের স্বভাবজাত। স্বভাব দিয়েই মানুষ বুঝে। বরং এগুলোতে কেউ দলিল-প্রমাণ তালাশ করলে মানুষ তাকে নিয়ে হাসবে।

আবার কিছু বিষয় আছে স্বভাবজাত নয়। স্বভাব দিয়ে বোঝা যায় না, বরং এর জন্য ভিন্ন দলিল-প্রমাণের প্রয়োজন। যেমন, নামাযে মুক্তাদীগণ সূরা ফাতেহা পড়বে কি না? নামাযে তাকবীরে তাহরীমার সময় ছাড়া অন্য সময় হাত ওঠাবে কি না? ইত্যাদি। এগুলো স্বভাব দিয়ে বোঝার উপায় নেই। এগুলো কুরআন হাদীসের দলিল-প্রমাণ দিয়ে বুঝতে হয়। মাযহাব মানা, তাকলীদ করা, মাযহাব ও তাকলীদের ক্রমবিকাশ ইত্যাদি বিষয়ও স্বভাবজাত বিষয়, দলিল-প্রমাণের বিষয় নয়। মানুষ অসুখে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। এটা স্বভাবজাত, ঠিক একই স্বভাবে মানুষ দ্বীনী মাসআলা-মাসায়েল জানার জন্য একজন প্রাজ্ঞ ব্যক্তির শরণাপন্ন হয়। এটাও স্বভাবজাত।

কেউ কেউ মনে করে মাযহাব মানা বা তাকলীদ করা মুক্তাদীদের সূরা ফাতেহা পড়া বা রাফয়ে ইয়াদাইন-এর মতো কুরআন হাদীসের দলিলনির্ভর বিষয়। কুরআন হাদীসের দলিল-প্রমাণ ছাড়া বিষয়টি বুঝে আসে না। তাই প্রথমে দলিল-প্রমাণ তালাশে ব্যস্ত হয়ে যায়। বিষয়টি এমন নয়। এজন্যই তো দেখা যায়, যারা মাযহাব মানে না বা তাকলীদ করে না দাবি করে, তাদের জনসাধারণও তাদের আলেমদের শরণাপন্ন হয়। বরং এ ছাড়া উপায়ও নেই। অবশ্য কুরআন হাদীসে মাযহাব ও তাকলীদের অসংখ্য দলিল আছে। বক্ষ্যমাণ পুস্তিকাতে এ বিষয়টি একটু বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি এ বিষয়ের সংশয় নিরসনে পুস্তিকাটি কিছুটা হলেও সহায়ক হবে ইন্শা-আল্লাহ।

আমার পরম সৌভাগ্য, মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা-এর সম্মানিত আমীনুত তালীম, মুসলিম বিশ্বের অন্যতম মুহাক্কিক ফকীহ ও হাদীস শাস্ত্রজ্ঞ হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম বইটি আদ্যোপান্ত দেখে দিয়েছেন। এই মহান ব্যক্তির সময় পাওয়া এবং তাঁর থেকে সময় নেওয়ার আমি মোটেও উপযুক্ত নই। তাঁর সান্নিধ্যে আমার কিছুদিন ছাত্র হিসেবে থাকার পরম সৌভাগ্যও হয়েছে, কিন্তু আমি তাঁর ছাত্র হতে পারিনি। তারপরও তিনি অধমকে সময় দিয়েছেন। এটা অধমের অন্যতম বড় প্রাপ্তি।

পাশাপাশি তিনি অধমের প্রতি সহানুভূতি করে একটি ভুমিকা লিখে দিয়েছেন এবং তিনি পুস্তিকার নামও চয়ন করে দিয়েছেন। আমি বাকরুদ্ধ, কীভাবে আল্লাহর শোকর আদায় করব এবং হুজুরের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব! আল্লাহ তাআলা হুজুরকে দুনিয়া ও আখেরাতে উত্তম বিনিময় দান করুন, আমীন।

হুজুরের কাছে একটি লেখা মানোত্তীর্ণ হওয়ার যে উচ্চমানদ-, জানি না আমার পুস্তিকাটি সেই মানে উঠতে পেরেছে কি না। তবে হুজুরের দেখে দেওয়ার পর পাঠককে এতটুকু বলতে পারি, এতে মারাত্মক কোনো ভুল নেই ইন্শা-আল্লাহ।

মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা-এর সম্মানিত উস্তাদ ‘এসব হাদীস নয়-১’-এর রচয়িতা হযরত মাওলানা মুতীউর রহমান ছাহেবও বইটি আদ্যেপান্ত দেখে দিয়ে এর ভাষাগত ত্রুটি যথাসম্ভব সংশোধন করে দিয়েছেন। তিনি আমার বড় মুহসিন মুরব্বী ও মুখলিস উস্তাদ। তাঁর প্রতিও অন্তরের গভীর থেকে অসংখ্য শুকরিয়া। আল্লাহ তাআলা উভয় উস্তাদকে তাঁর শান অনুযায়ী প্রতিদান দান করুন, আমীন।

পুস্তিকাটিতে যে কয়টি শিরোনামের ওপর যতসামান্য আলোচনা করা হয়েছে তার প্রায় সবকটিই পরস্পরে সূত্রবদ্ধ। তাই পাঠকের প্রতি পুরো পুস্তিকাটি পড়ার অনুরোধ রইল। নতুবা বিষয়টির পূর্ণাঙ্গ কাঠামো সামনে নাও আসতে পারে, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাঠকের ভুল বোঝাবুঝিরও আশঙ্কা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা আমাদের হেফাযত করুন।

পাশাপাশি পুস্তিকাটি পড়ার পর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যদি কোনো প্রশ্ন, সংশয়, অস্পষ্টতা বা পরামর্শ থেকে থাকে, তাহলে তা লেখককে জানানোর অনুরোধ রইল। আল্লাহ তাআলা এর উত্তম প্রতিদান দেবেন।
পরিশেষে দুআপ্রার্থী, আল্লাহ তাআলা যেন পুস্তিকাটি কবুল করেন, সিহহাত ও আফিয়াতের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘ দ্বীনী হায়াত দান করেন।

দুআপ্রার্থী
ইমদাদুল হক
২৭ রমযান, ১৪৪১ হিজরী
চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা
User Reviews
0 out of 5
0 Total Reviews
Additional Information
Version
1.1
Updated
Jun 02, 2022
Available on
Write a review